মাইজভা-ার শরিফ : ঐশ প্রেক্ষিত
০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

সকল প্রশংসা রাব্বুল আ’লামিনের। পরম করুণাময় ভালবাসার অনুরাগে মানুষ সৃজন করে আশরাফুল মাখলুকাত তাবৎ সৃষ্টিকূলে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা প্রদান করেছেন। বিপুল নেয়ামতের বরকতে সযতনে পরম মমতায় লালন পালন করেছেন। বহুরূপী-রূপে, নিত্য নবসাজে সৃষ্টির মাঝে প্রকাশিত হয়েছেন। নবী-রছুল (আ.) অলি-দরবেশ (র.) দ্বারা সুপথ দেখিয়েছেন। ঐশবিধান অবতীর্ণ করে শান্তি ও মুক্তির পয়গাম বারতা দিয়েছেন। নবুয়ত-বেলায়তের ধারায় হক্কুল্লাহ্, হক্কুল এবাদের মিশন সফল করেছেন। মানুষের প্রতি আল্লাহ তা’লার দয়ার নিদর্শন পাক কালাম। জ্ঞাত অজ্ঞাত অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের যাবতীয় তথ্য উপাত্ত বিষয় আশয় এতে বিদ্যমান। যা শুধুমাত্র আল্লাহর প্রীতিধন্য মহাত্মাগণ হৃদয়ঙ্গম পূর্বক প্রকাশ করতে সক্ষম।
রহমতুল্লিল আ’লামিন দয়াল নবী হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (দ.) এর প্রতি দরূদ ছালাত ছালাম। পাক পাঞ্জাতন আহলে বাইত ছাহাবায়ে কেরামের (র.) প্রতি তছলিম। প্রিয় রছুল করিম (দ.) শফিউল মোজনবিন, আল্লাহ্ তা’লার যাবতীয় সৃষ্টির উৎস। তাঁর পবিত্র নূরের তরঙ্গে সৃষ্টির আবর্তন বিবর্তন গতি প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণ। তাঁর মুবারক সত্ত্বা আদি অন্তে বর্তমান হেতু সূচনা থেকে অদ্যবধি সৃষ্টির বিকাশ বিস্তৃতি। “আল্লাহ তা’লা ফেরেস্তাকুল সহযোগে রছুল করিম (দ.) এর দরূদে রত, বান্দার প্রতিও দরূদের নির্দেশ অবিরত। ‘‘বারেক মুখে নিলে যাঁর নাম, চিরতরে হয় দোজখ হারাম।”
আউলিয়া দরবেশ পীর মুর্শিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। তাঁরা আল্লাহ্ তা’লার নেয়ামত প্রিয় রছুলের (দ.) শাফায়াত মানুষের নাগাল সাধ্য করেছেন, তাঁদের আনুগত্যের মাঝে আল্লাহ্-রছুল (দ.) এর রেজামন্দি সন্তুষ্টি নিহিত। পাক কালামে ছেরাত্বাল মুস্তাকিমের দিশারী বিপুল ঐশ্বর্য নেয়ামতের অধিকারী হিসেবে তাঁদের পরিচিতি বিবৃত রয়েছে। যুগোপযোগী কৌশলদ্বারা তাঁরা আল্লাহ্র পথে মানুষকে আহবান করেন।
মানব সৃষ্টির পূর্বে বিবিধ প্রকার অগুণতি প্রাণির অস্তিত্ব প্রমাণিত। প্রত্যেক সৃষ্টির সুক্ষ্ম-স্থুল সত্ত্বায় আল্লাহ্ তা’লার মহিমা বিকশিত। মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য যে ভাবগাম্ভির্যে পাক কালামে চিত্রিত, তা মমত্ত্ব মহত্ব দয়া কৃপা, একান্ত প্রেম-ভালবাসার। আল্লাহ্পাক ভালবাসার উৎস, ইশ্কে ইলাহি নামে তাঁর প্রকাশ। দয়াল নবী (দ.) ভালবাসার সূত্র, হুব্বে রছুল উচ্ছ্বসিত অনুভব। আউলিয়া দরবেশ পীর বুজর্গগণ (র.) ভালবাসার কেন্দ্র, তা’জিমে শায়েরুলাহর শ্রদ্ধাভক্তি। মানব হৃদয়ে ভালবাসার যে অনুভূতি সর্বদা তরঙ্গায়িত, তা কেন্দ্র সংযুক্ত হলেই লক্ষ্য অর্জন-সফল জীবন। অন্যথায় দুর্গতি-শয়তানি জীবনাচরণ, নফছে আম্মারা কু-প্রবৃত্তির জিঞ্জির শিকল পরিবৃত্ত আত্মার বন্দিশালায় অভিশপ্ত নরকবাস। কলুষ কালিমায় ভয়ংকর জিন্দেগী, অনেক আছে যেন কিছুই নেই। মরীচিকার পেছনে প্রাণপণ ছুটাছুটি অবশেষে হতাশাব্যঞ্জক ফলাফল। মানব সত্ত্বায় পর্যাপ্ত জ্ঞানবোধের উপাদান আছে। আল্লাহ তা’লার মর্জি, বান্দাগণ সজ্ঞানে স্বাধীন চিন্তাশক্তিতে সিদ্ধান্তে উপনীত হবে।
বিশ্ব মানচিত্রে সুন্দর ভূখন্ড সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা নদী মেখলা গিরি কুন্তলা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এদেশের গৌরবদীপ্ত জনপদ চট্টগ্রাম। প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে ভরপুর আধ্যাত্ম ঐতিহ্যমন্ডিত চট্টগ্রাম জগৎখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার বর্ণনায় ‘মদিনাতুল আখজার’। হজরত পীর বদর শাহ্ (র.)’র কেরামতি চাঁটির আলোকমন্ডিত সাফল্যের উর্বর ক্ষেত্র চট্টগ্রাম। পৃথিবীর নানা দেশ থেকে এখানে এসেছে ধর্মপ্রচারক সাধক তাপস বণিক জ্ঞান অন্বেষক পর্যটক গবেষক হরেক পদবীর ব্যক্তিত্ববর্গ। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সবার মোক্ষলাভ যেন অবধারিত। ইতিহাসখ্যাত বার আউলিয়া সহ অসংখ্যা আউলিয়া দরবেশের স্মৃতিধন্য চট্টগ্রামে দয়াল রছুল (দ.) এর পবিত্র কদম মোবারক চিহ্ন সংরক্ষিত। ধর্মগ্রন্থ সূত্রে হিন্দুদের বিশ্বাস মতে কলিকালের মহাতীর্থ চন্দ্রনাথ, আদিনাথ, কাঞ্চননাথ চট্টগ্রামে। জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে প্রথম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নালন্দা পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামেই স্থাপিত বলে কথিত আছে। নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে রয়েছে মহামতি বুদ্ধের পবিত্র কেশধাতু। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন খ্রিষ্টতীর্থ ‘মরিয়ম আশ্রম” চট্টগ্রামের দেয়াং এ। হজরত ছাহাবায়ে কেরামের (র.) ক’জন চট্টগ্রামে পদার্পণ করার ঐতিহাসিক বিবরণ আছে। শ্রীরাম, লক্ষণ, সীতা প্রমুখ হিন্দু অবতারের লীলাক্ষেত্র চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। মহা কারুণিক তথাগত বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্য, গুরু নানক প্রমুখ ধর্মাবতারগণ চট্টগ্রামের মাটি স্পর্শ করে বাধিত হয়েছেন। হজরত শেখ ফরিদ (র.), হজরত সুলতান বায়েজিদ বোস্তামি (র.) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য দরবেশগণ চট্টগ্রামে মোক্ষলাভ করেছেন।
রাজনৈতিক গুরুত্বে চট্টগ্রাম ইতিহাসের বলিষ্ঠ অধ্যায়। বাদশা সুলতান রাজা মহারাজার রাজত্বকাল থেকে চট্টগ্রাম রাজনীতির নিয়ন্তা। নিকট অতীতের সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে মুক্তি সংগ্রাম, স্বাধীনতা ঘোষণা চট্টগ্রামেই সূচিত। জাতীয় স্বার্থ, আন্তর্জাতিক মর্যাদার প্রশ্নে চট্টগ্রাম এগিয়েছে সবার আগে ইস্পাত দৃঢ় প্রত্যয়ে। বিদ্যাবুদ্ধির অনুশীলন, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রচলন, সভ্যতার উন্মেষ, আবিস্কারের যৌবনকালে চট্টগ্রাম ছিল অতি লোভনীয়। এ অঞ্চলে আধিপত্যের থাবা বিস্তার করেছে অনেক পরাশক্তি। কতেক হাত টিকেছে কম-বেশী সময়ে তবে গুটিয়েছে, পুড়েছে বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গে।
চট্টগ্রামের মানুষের বোধ বিশ্বাস ধর্মানুরাগ পোক্ত। সমাজ সংস্কৃতি সভ্যতা কৃষ্টি সচেতনতা পুষ্ট। মায়া মমতা দানশীলতা অতিথিপরায়ণতায় নামডাক। আল্লাহ তা’লার কুদরতি পরিকল্পনায় সুবিন্যস্ত চট্টগ্রামে অর্গলমুক্ত ঐশপ্রেমের নকীব গাউছুল আজম মাইজভা-ারী আবির্ভূত হবেন। তাই চট্টগ্রামের মহাত্ম্য আল্লাহ তা’লার হেফাজতে বিকশিত।
সুক্ষ্ম আন্তর্দৃষ্টির তীক্ষ্ম শক্তিসম্পন্ন দরবেশ ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা হজরত মহিউদ্দিন ইবনুল আরবি (র.) ৩৬৩ হিজরীতে ভবিষ্যদ্বাণী করেন- এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে চীনের পাদদেশে ভূখন্ড রেখার পূর্বপার্শ্বে বিভিন্ন ধর্মবর্ণ শ্রেণীগোত্রের আবাসভূমে ‘খাতেমুল অলদ’ গাউছুল আজম তসরিফ আনবেন। মহাত্মা ইবনুল আরবির ‘ফছুছুল হেকম’ আধ্যাত্ম কেতাবের ‘ফচ্ছেশীষ (আ.)’ পরিচ্ছদের বিবরণে চট্টগ্রাম উপস্থাপিত হয়েছে স্বচ্ছভাবে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে উত্তরে ৩০ কি.মি. দূরত্বে মাউজভা-ার শরিফের অবস্থান। ফটিকছড়ি থানাধীন ঈছাপুর পরগনার অন্তর্গত এককালের অজপাড়া গাঁ মুসলিম সৈন্য বাহিনীর খাদ্য রসদপত্রের ভা-ার থেকে মাইজভা-ার নাম ধারণ করে এখন বেলায়তের ঐশ্বর্য ভা-ার। বিশ্ব আধ্যাত্মপরিমন্ডলের কেন্দ্রভূমি মাইজভা-ার শরিফ গাউছুল আজমের পদস্পর্শে আল্লাহ্ তা’লার অনন্ত রহমতের অফুরান প্রস্রবন। বায়তুল মোকাদ্দস, মক্কা মুর্কারমা, মদিনা মুনাওয়ারা, বাগদাদ, আজমির প্রভৃতি পবিত্র নগরী পৃথক পৃথক ফজিলতে রব্বানির মহিমায় উজ্জ্বল। কালের পরিক্রমায় গাউছুল আজমের পদ পরশ ধন্য মাইজভা-ার শরিফ আধ্যাত্ম বলয়ে ঐশ মহিমায় দেদীপ্যমান। রোম, গয়া, কাশী, বৃন্দাবন, লুম্বিনী, মথুরাসম পবিত্রজ্ঞানে মাইজভা-ার শরিফে শ্রদ্ধাবনত আধ্যাত্ম সচেতন মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বাহাইসহ নানা জাতি ধর্মের মানুষ। (চলবে)
লেখক: মাইজভা-ারী দর্শনের বাহক ও প্রচারক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো